স্বদেশ ডেস্ক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রীর করা ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত হাসান আল মামুন নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ‘মিথ্যা ষড়যন্ত্রের শিকার ধর্ষিত ছেলের আর্তনাদ!’ শিরোনামে একটি পোস্ট দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন তিনি। সেখানে অভিযোগকারী ছাত্রীর সঙ্গে মেসেঞ্জারে তার কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশট ও চ্যাটের ভিডিও দিয়েছেন। প্রয়োজন মতো এসব আদালতে উপস্থাপন করবেন বলেও তিনি জানান।
অভিযোগকারী ওই ঢাবি ছাত্রীর করা ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত হাসান আল মামুন নিজের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি পান গতকাল বুধবার রাতে। এরপর রাত ১১টার দিকে তিনি ফেসবুকে স্ক্রিনশট-ভিডিওসহ পোস্টটি দেন। পোস্টে সংগঠনের ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই ছাত্রী তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে দাবি করেন মামুন।
মামুনের ফেসবুক পোস্ট
‘আমি হাসান আল মামুন, যে ছেলেটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আপনাদের অধিকার আদায়ে ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রধান হয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। এই আন্দোলন করতে গিয়ে অনেক হামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছি, আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে বানানো হয়েছিল জামাত, আমাদের নামে দেওয়া হয়েছিল শিবির ব্লেইম এবং বিএনপির তারেক রহমানের কাছ থেকে ১২৫ কোটি টাকা পাওয়ার মিথ্যা অভিযোগ, যার কোনোটির সাথে আমাদের ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা ছিলোনা বলে প্রতীয়মান হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের হয়ে টানা ৩ বার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন, ২ বার আমার নেতৃত্বে আন্তঃবিভাগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরভ অর্জন করে ডিপার্টমেন্ট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ভলিবল টিম ও মুহসীন হলের ফুটবল ও ভলিবলে টিমে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল টিমের নিয়মিত খেলোয়ার ছিলাম আমি। এছাড়াও আমি নেত্রকোণা জেলা ফুটবলের টিমের একজন সদস্য। এই দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বহু সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার সুবাদে অনেকের সাথে আমার পরিচয় হয়। দলমত নির্বিশেষে কেউ আমার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কোন অভিযোগ আনতে পারেনি।
যখনই আমরা নতুন ধারার রাজনীতি করার ঘোষণা দিয়েছি এবং সারাদেশের মানুষের মাঝে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিলে তখন আমার নামে ও সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের নামে ধর্ষণের মত গুরুতর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যা রাজনৈতিক ভাবে আমাকে এবং আমার সংগঠনকে হেয় করার জন্য এবং দেশের মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য করা বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। দীর্ঘ ৮ বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও আড়াই বছর সংগঠনের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনে যারা আমাকে কাছ থেকে দেখেছেন তারা হয়তো বলতে পারবেন কেমন ছেলে আমি। অভিযোগকারী মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে আমাকে, আমার পরিবার ও সংগঠনের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করেছে। আচ্ছা এই সমাজে কি শুধু মেয়েদের পরিবার-পরিজন আছে! ছেলেদের পরিবার কিংবা পরিজন নেই! মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়ে বাবার মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। চরম বাস্তবতায় সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গণমানুষের অধিকার আদায়ে কাজে মনোনিবেশ করেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস আজ সারাদেশের মানুষের কাছে আমাকে মিথ্যা মামলায় ধর্ষক বানানো হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর মতো এই মেয়ের সাথেও আমার পরিচয় ছিল, কিন্তু মেয়ে যে অভিযোগ করেছে তা আমাকে ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে করেছে। মেয়ে নিজেই এক সময় স্বীকার করে যে সে পরিকল্পিত ভাবে আমাকে ফাঁসাতে এগুলো করেছে, নিচে একটি স্ক্রিনশট এবং তার ভিডিও দেওয়া হলো। স্ক্রিনশট সত্য মিথ্যা বলে অনেকেই মতামত দিতে পারেন, কিন্তু এই চ্যাট এখনও আমার ফোনে আছে। প্রয়োজনে আমি আদালতের সামনে সরাসরি তা উপস্থাপন করবো। সততা-নিষ্ঠা এবং নিরপেক্ষতাই আমার জীবনে আজ কাল হয়ে দাঁড়াল। আমি এক গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
আপনারা যারা আমাকে চেনেন বা জানেন, তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, যদি আমি অপরাধী হয়ে থাকি তাহলে ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করবেন আর যদি নিরপরাধ হয়ে থাকি আমার পাশে দাঁড়াবেন। ভয়াবহ দুঃসময়ের মুখোমুখি জীবন!’
উল্লেখ্য, গত ২১ এবং ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনসহ ৬ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ এনে লালবাগ ও কোতোয়ালী দুই থানায় দুটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর বুধবার রাতে ছাত্র অধিকার পরিষদ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ রয়েছে। যেহেতু হাসান আল মামুন তার সংগঠনের আহ্বায়ক পদে রয়েছেন, তাই নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে তাকে সাময়িক পদ থেকেও অব্যাহতি দেয় সংগঠনটি।